December 23, 2024, 1:54 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
সেই ২০২২ সালের কথা। ঐ বছরের মার্চে ঢাকায় নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই এই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ইস্যু করে শুরু হয় এ তৎপরতা। তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতরাও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেখিয়েছেন নানা তৎপরতা। বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি ও তাদের মৌলবাদী মোর্চা জামাতে ইসলামীর নানা কর্মকান্ডে এক ধরনের পরোক্ষ সমর্থনে মার্কিন এই রাষ্ট্রদূতের কথা বার্তা চোখে পড়তে তাকে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন আশঙ্কায় ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পেছনে মূল ভুমিকা ছিল পিটার হাসের এ নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। প্রশ্ন ওঠে পশ্চিমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেআ আবার গঠিত হয়েছে সরকার। নির্বাচনের পর হঠাৎ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ছোটাছুটি করছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
মনে হচ্ছে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই চলতে চাইছেন তিনি। নির্বাচনের পর অনেকটা উল্টো পথে পশ্চিমাদের অবস্থান। বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেন মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত।
নির্বাচনের আগে ও পরে এমন বিপরীতমুখী আচরণের কারণ কী? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া পদক্ষেপগুলোর পেছনে ব্যবসায়িক স্বার্থই প্রধান। নির্বাচনের আগে ভিসানীতির মতো চাপ প্রয়োগ ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে মত বিশ্লেষকদের। আর এসব ভুলের পেছনে অন্যতম প্রধান কারন ছিল বিএনপির রাজনীতির প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রের আস্থা প্রকাশ করতে যাওয়া। বলা হচ্ছে মার্কিন সরকার বিএনপির কথা রাখলেও বিএনপি শোনেনি মার্কিন রাষ্ট্রের কথা। বলা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছিল বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশ্বাস দিয়েছিল যে ভিসা নীতি সহ বিভিন্ন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করবে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। আর সেই নির্বাচনে যদি কোন রকম কারচুপি বা অনিয়ম হয়, তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না, আরোপ করবে অর্থনৈতিক অবরোধসহ নানা রকম অবরোধ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাজি হয়নি বিএনপির। এনকি বিএনপির শীর্ষ অনেক নেতারা এ ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং অনীহার কারণেই এই এব্যাপারে কোন ঐকমত্য হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেছিলেন এ সব নিয়ে। তাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং মনোভাব সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তারা বলছেন যে এই মুহূর্তে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানের বাইরে গেলে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক উঠবে। এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফর্মুলা ছিল যে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে শর্তহীন সংলাপে যোগদানের মাধ্যমে। আর এই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে সরকারকে মার্কিন প্রশাসন থেকে চাপ দেওয়া হবে যেন নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদল, পুলিশে রদবদল সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিত। এ ধরনের চাপের কাছে সরকার শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতার পথে যেত। কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন করা হতো এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে কিছু কিছু ব্যক্তি নিরপেক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করত। কিন্তু সেই সুযোগ বিএনপি গ্রহণ করেনি।
মনে করা হয়, তারেক জিয়ার কারনে এটি হয়নি। কারন তারেক মনে করেন, যদি বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে দল তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ৪০/৫০ যে আসনই বিএনপির পাক না কেন? তখন দলের ভিতর গুরুত্বহীন হয়ে পড়বেন তারেক জিয়া। ফলে এই নির্বাচনে গিয়ে তিনি বিএনপির কর্তৃত্ব হারাতে চাননি। আর এই সমস্ত বাস্তবতার কারণেই শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ শোনেনি বিএনপি।
এদিকে. নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর ভারত, জাপান, রাশিয়াসহ বড় গণতান্ত্রিক দেশ শুভেচ্ছা জানানোয় এ গণতান্ত্রিক দুর্বলতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারছে না মার্কিনিরা। রাশিয়া তো ইতোমধ্যে সরাসরি মার্কিন ভুমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে একাধিক বিবৃতি দিয়ে। এ অবস্থায় মার্কিনীদের আর কিছ‚ করার উপায় নেই। তাই তারা সরকারের সাথে কাজ করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগেও বিভিন্ন দেশে একটি দলের বিরোধিতা করার পর সরকার গঠন করায় তার সঙ্গে কাজ করার নজির রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। পাশাপাশি নতুন সরকারের সঙ্গে বিরোধ রেখে ব্যবসায়িক ক্ষতি করতে চায় না মার্কিনিরা। মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মোড়কে হলেও বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া পদক্ষেপগুলোর পেছনে ব্যবসায়িক স্বার্থই প্রধান।
Leave a Reply